মণীন্দ্র গুপ্ত-র কবিতা ও এক মাথা
খারাপ লোকের মন
মণীন্দ্র
গুপ্ত। যাঁর কবিতার অবয়ব কেবল অনুমান করা যায়, ছোঁয়া যায় না। সমস্ত পথ, আকাশগঙ্গা
পেরিয়ে ধরতে চাওয়া একপ্রকার দুরুহ ব্যাপার। আমাকে আমার খারাপ অবস্থা কাটানো কালীন
যে কবির কাছে বারংবার ফিরে যেতে হয়েছে, যে মৌ পোকাদের গ্রামে নিজেকে ছেড়ে রেখে
ভাবতে হয়েছে সেই নিজেকে খোঁজার এক কণাও আমার নয়। এই সব দান তাঁর। সেই অব্যর্থ
সূর্যের পাঞ্জার ছাপ রেখে দিয়েছে সে আমার বুকে। একজন ব্রহ্মপুরুষের সম্মুখে
দাঁড়িয়ে খড়কুটো হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। যে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে এক জাগতিক
অথচ জল হয়ে গলে যাওয়া পৃথিবীর স্রোতে। এই সেই সাতচক্র যা ভেঙে বা যার বাধা সরিয়ে
শরীরে প্রবেশ করে মুক্ত করে দেওয়ার পরিবেশের সত্যতায় একা থাকতে হয়। আর সঙ্গত কারণেই মনে হতে থাকে একা হওয়া অসম্ভব।
আমার গুরু
বিকেলে
রাভি নদীর পাড়ে শুকনো ঝাঁটি ঘাসের ঝোপ আর
কয়েকটা শিশুগাছ। ওপারে
জাহাঙ্গীরের কবর- মিনারেট। সূর্য অস্ত যায়...
কোর্ট মার্শাল হওয়া পাঠান বিশাল বুক চিতিয়ে, দুই হাত দিগন্তে ছড়িয়ে
চেঁচিয়ে উঠল : ' হাঃ নঙ্গাসে খুদাভি ডরতে হ্যঁয়।'
শুনে, নদীর বুকের মধ্যে ন্যাংটো মাছ আনন্দে লাফ দিল
আমি সে মুহূর্ত থেকে তার চেলা।
বিকেলে
রাভি নদীর পাড়ে শুকনো ঝাঁটি ঘাসের ঝোপ আর
কয়েকটা শিশুগাছ। ওপারে
জাহাঙ্গীরের কবর- মিনারেট। সূর্য অস্ত যায়...
কোর্ট মার্শাল হওয়া পাঠান বিশাল বুক চিতিয়ে, দুই হাত দিগন্তে ছড়িয়ে
চেঁচিয়ে উঠল : ' হাঃ নঙ্গাসে খুদাভি ডরতে হ্যঁয়।'
শুনে, নদীর বুকের মধ্যে ন্যাংটো মাছ আনন্দে লাফ দিল
আমি সে মুহূর্ত থেকে তার চেলা।
আমার নিজের এই কবিতাটি পড়লেই মনে হয় বিলাসের মধ্যে থাকা প্রতিটি মানুষ নিজেকে অপরাধী মনে করে।আর তার অপরাধ যেন একটি মুক্তো, যার খোঁজে একজন সন্ধানী মানুষ হয়রান হয়ে পড়ে, তার প্রকৃত দশা থেকে ঠিক তখনই সে নিজেকে ছাড়িয়ে যায়। একজন উলঙ্গ মানুষ শুধু কী খুঁজতে পারে? তার আবরণ? কখনই নয়। সে খোঁজে নিরাভরণ চরিত্র। যে নিজের ভিতর নিজেকে শান্ত করতে অক্ষম।
প্রকৃতই কথাটি হল কবিতার রূপ আজ ফ্যাকাশে। কারণ বিবর্ণতার ভিতরেই মূল রঙ লুকিয়ে রাখা কাজ একজন কবির। যেখানে কেবল প্রয়োজন একটা আয়না। যার কাছে দাঁড়ালে নিজস্ব মুখ ব্যতীত আরও মুখ দেখা যায়। আর সেটিই হল তাঁর আবিস্কৃত সত্য। আর এটিই কবির কাজ। এই সত্যের দংশন বয়ে নিয়ে বেড়ায় একজন কবি চঞ্চল ও চকিত ভঙ্গিতে। সেখানে বিশ্বাসঘাতকতা বলে কোনো শব্দের আঁচড় নেই। সাফল্য শব্দটি যেখানে বাহুল্যপূর্ণ। যা মানুষের সাথে প্রযোজ্য নয়, কর্মযোগের সাথে নয়। সেখানে জ্ঞানযোগ বা আদিসূত্রের কোনও তুলনা হতে পারে না। আর সেখানে অসাহয়তার ফুল ফুটে ওঠে, ছিটকে আসে এক প্রকান্ড দক্ষিণার আকারে। যা আমরা কখনও নিতে পারি আবার কখনও নয়।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর চিত্রাঙ্গদা কাব্যনাটকে যে দ্বান্দ্বিকতার এক চূড়ান্ত প্রেক্ষিত রেখেছিলেন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সৌন্দর্য ও উপলব্ধিজাত সৌন্দর্যের সেটা কি একজন কবির কাছে চরম সত্য নয়? আবার যদি প্রশ্ন করা হয় কে আমাকে কবিতা লেখায়? এই প্রশ্নের সম্মুখে মণীন্দ্র গুপ্ত বলেছেন - অখন্ডকাল, সর্বব্যাপী জগৎ এবং স্পন্দিত অগণ্য জলবিম্বের মতো উত্থিত নিমীলিত জীবন। একবার ভেবে দেখা হোক বক্তব্য দুটির প্রভেদ কোথায়? আদৌ নেই কোথাও। আজ যেমন ভেদাভেদের মাঝে এক দীর্ঘ ট্যানজেন্ট ধরে পড়ে আছে একটাই শব্দ তা হল লেখা। উপলব্ধি আর অখন্ডকালই এক সুতোয় বাঁধা সৌন্দর্য। চিরন্তন সৌন্দর্য সেটাই যা জগৎকে সুসংবদ্ধ করে রেখেছে। একজন কবি অসুর হয়েও শৈবসাধক হতে পারেন। যিনি কালের নিয়মে তাঁর অর্জিত সবকিছু তছনছ করে দিতে পারেন আবার কখন জোড়া লাগাতে চান ব্যতিক্রমী হয়ে।
কষ্টের নিস্বন চেতনাস্রোত থেকে সে বুদ্ধের কাছে যায়। সেইখানেই হয়তো রয়েছে চুরাশির মহাসিদ্ধতা। যেখানে আঘাতপ্রাপ্ত হয় অথবা নিজের দাঁত, নখ, দেহজ সমস্ত কিছু উপড়ে ফেলতে ছুটে যায়। নিছক অবলীলায় সে মেনে নিতে পারেন সমস্ত কিছু। আবার নাও পারেন। এই জায়গায় তিনি একজন সাধারণ অথচ সাধক। সাধারণ আঘাত থেকেই জন্ম নেয় এক বিশুদ্ধ এবং শোধিত কবিতা। যে কারও ধার ধারে না। সয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তার ভিতর এতটাই প্রকট। এই জায়গায় একজন তিব্বতি তান্ত্রিকের কথা উল্লেখ করতেই হয়। কারণ কবিতা আজ পরম তন্ত্র আমার কাছে-
" It is a practice
of bodhisattvas to remain in solitary places where ( mental) obscurations
gradually diminish due to the absence of harmful objects, where virtues gradually
increases due to the absence of distraction, and where penetration into the
meaning of dharma arises due to clear- mindedness"- Ngulche Thogmed Zangpo
সত্যিই কবিতার আশপাশ থেকে আজ অনেককিছুই নিরসনের প্রয়োজন। যেখানে কবিতা একাকী। তার আশ্লেষের আর দরকার নেই।
এই উদ্ধৃতিটা পড়বার পর আপনি মণীন্দ্র গুপ্তকে হাতে নিয়ে দেখুন, যদি আপনার ' বিন্দু ' সম্পর্কে কোনো প্রত্যয় থেকে থাকে তবে অনেকটা পথ পরিস্কার হতে বাধ্য। এটাই কবির স্বার্থকতা। যেখানে আজ নিয়ম প্রণয়ন আর নরম কাঁচা শরীরের পার্থক্য বোঝার সময় এসেছে। তা ব্যতীত বাকিটুকু নৌকা দ্বিতয়ার্পিত পদ। কবি কখনই শ্রেষ্ঠ রত্ন নন। শ্রেষ্ঠ রত্ন এক তুচ্ছতম এপিথেট হতে পারে। কবি শুরু থেকে শেষ অবধি একজন পাঠকের কাছে যদি গোবর্ধন আচার্য হতে পারেন সেটিই তার সফলতা।
এখানে আমি 'গাছপালা ' কবিতার কিছু অংশ তুলে দিলাম। কারণ, আপনারা বুঝতে পারবেন সহজেই কেন আমি আধ্যাত্মিকতার বীজ বারবার ফুঁড়ে তুলছি। জীবনের cyclic existence ব্যতীত একজন কবির আর কিছুই নেই। ঠিক যেমন রামমোহন রায় কোনো কারণে ব্রাহ্ম সংগীত লিখেছিলেন আজ অনুমান করা যায়।
একজন তবলচি যখন কোনো ঠেকা বাজান তার হাতের কায়দাটি শুধু তাঁর নিজের অর্জিত। ক্ষমা ও সকরুণ জ্ঞান। যা আমরা কেবলই দেখে যেতে পারি tactile sensation দিয়ে। এর বেশি বিশেষ কিছু পারবার নেই আমাদের। আর এই অঞ্চলটুকুতেই বিয়োগ বলে কিছু নেই। যা রয়েছে তা কেবল প্রতিত্য সমুৎপদ। যা কবির একার। নালিপথের কোথাও ঠোক্কর খেয়ে নিরাময়ের জন্য ফিরে আসে mundane বলে এক শব্দের কাছে।
* Ngulche Thogmed Zangpo - Tibetan
tantric
* Bindu- The white and red drops
* Pratitya- samutpada- Dependent arising/ existence
* Bindu- The white and red drops
* Pratitya- samutpada- Dependent arising/ existence
অসম্ভব ভালো
ReplyDeleteবেশ লাগলো
ReplyDelete