Sunday 20 October 2019

বাক্‌ ১৩৮ ।। রণজিৎ অধিকারী



ক্লাসঘর

ব্রহ্মাণ্ড বানানোর আগে আমাদের চাই নানা আকারের
অনেকগুলি বৃত্ত, বিষমবাহু ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ কিংবা বহুভুজ;
তারও আগে আমাদের উচিত একটা ধারণা তৈরি করা।
যাতে পুনরায় গাদাগুচ্ছের ভুলে ভরা এমনই আরো কতক ব্রহ্মান্ড না তৈরি হয়ে যায়।
কেন ধারণার অতীত এমন কিছু বানাব আমরা যা পরেও কেউ ধারণা করতে পারবে না?
খেয়াল রাখা উচিত যে কোনো মহাজাগতিক বিস্ফোরণ ও কাণ্ডই হবে রহস্যহীন,
প্রতিটি বস্তুই হবে বাস্তবজ্ঞানে পূর্ণ...
জলহাওয়ার এই খেয়ালি আচরণ বিষয়েও
অনেক ভাবা উচিত আমাদের। মনে রেখো
অনায়ত্ত কিছু যেন না করে বসি আমরা: সব হব
পরিচ্ছন্ন অল্প সংখ্যার কিছু গুণ্য, ভাজক, গুণক, ভাজ্য
আর যোগফল যা অনায়াসে কষে ফেলব আমরা।
এসো, আপাতত কিছু বিভিন্ন আকারের বৃত্ত, গোলক,
ত্রিকোণ, বহুকোণ ইত্যাদি নিয়ে ধারণা তৈরি করি।




জ্যামিতি বাক্স

কেননা সবচেয়ে জরুরি ছিল একটা বৃত্তের ধারণা তৈরি করা,
আর দলা পাকানো এক মন্ডকে ঠিকঠাক গোল করে তোলা
তখন কেই বা জানত ঘুরতে ঘুরতেই তারা সব
       এক এক দাম্ভিক গ্রহ নক্ষত্র হয়ে উঠবে!
আজও যখনই কেউ একটা জ্যামিতি বাক্স হাতে নেয়, আমি নতুন সম্ভাবনায় কেঁপে কেঁপে উঠি; যেন অযুত প্রাক্- ধারণা প্রস্তুত হতে থাকে আবার নতুন নতুন ব্রহ্মাণ্ড তৈরির প্রক্রিয়া যেন শুরু হবে এই এখুনি, ওর হাতেই...

কেননা এই সমূহ ব্রহ্মাণ্ড হয়ে ওঠার আগে ছিল মাপজোখের
সামান্য 'টি ধারণা আর এক অলীক জ্যামিতি বাক্স;

কার হাতে ছিল?

6 comments:

  1. কবিতা দুটো এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। ভালো লাগা অনেক।��

    ReplyDelete
  2. ভালো লাগল। বড় প্রশ্নের দিকে তাকিয়ে থাকা বিষ্ময়।

    ReplyDelete
  3. Duikhan chomotkar lekha. Onek shuveccha roilo.

    ReplyDelete
  4. এই দুটো কবিতাই বেশ সুন্দর লাগলো।

    ReplyDelete
  5. প্রথম কবিতাটি বিষয়ের মজার জন্য ভালো লাগল, কিন্তু একদমই ভালো লাগল না যেজন্য সেটা হল এটি একটি চরম উদ্দেশ্যবাদীর কবিতা হয়ে উঠেছে। কবিতার কাছে তত্ত্বের বা ইজমের প্রতিষ্ঠা শিখতে যাব না নিশ্চয়! বিনতার গর্ভে যে গরুড় জন্মাবে তা কি বিনতা জানতেন? সৃষ্টির পূর্বেকার অবস্থা সৃষ্টিকর্তাও জানেন না। জানলে সৃষ্টিকে আর সৃষ্টি বলা হত না। তবে কী বলা হত? কবিতা বা শিল্প শেষপর্যন্ত কেমন হয়ে উঠবে তা কি আগাম জানতে পারি? বাঁশির সুর কেমন বাজা উচিত বা ওর ইনফিনিটি কি কম্পিউটার বলে দেবে? মানবমন কত বেশি ভাবতে পারে তার হিসেব কষে কি অসীমতাকে ঘিরে ফেলা যাবে? প্রেমের পিছনে হরমোনের রসায়ন শুধুই কিংবা ফুলের হাসিতে কেবল কারসাজিই? জীবনের অসীমতা হল শিল্পের অসীমতা যতটুকু ততটুকুই। নিয়মের পৃথিবীতে মুক্তি যে ঘটে না, তা আমরা এতদিনে জেনে গেছি। সমদর্শন বা মানবতা প্রদর্শনের বোধহয় একটা অন্ধকার ও অমীমাংসিত দিক হল-- কে কাকে কীভাবে কেন মানবতা দেখাবে এটা নির্ধারণকালীন গড়ে ওঠা বা আগন্তুক যে হিংস্রতা বা বঞ্চনা। চাহিদার তুলনায় জোগান সর্বদাই অপ্রতুল, নয়তো চাহিদার কথাই উঠতই না; আর এ-কারণেই এ বিপত্তি। বরং দ্বিতীয় কবিতাটিতে রহস্য শেষ হয়ে যায়নি! এ রচনাতেও বিষয়গত মজা রয়েছে। রণজিৎ-এর বলবার ভঙ্গিটি কিয়দংশে নিজস্ব মাত্রার, এবং কবিতাগুলো মনে হয় যেন ভিন্ ভাষার কবিতার বঙ্গানুবাদের ভাষা! এরকম যদি হয়ও, বলব এরকম তো কেউ বুঝিয়ে বলার ভঙ্গিতে ভাবেননি। সবিশেষ উপভোগ করি এই কবির কবিতা। আমি এঁর দুটো বই সংগ্রহ করতে পেরেছি, প্রত্যয়ী কবি। আসুন আমরা আরও আরাধনাশীল হই।

    ReplyDelete