গোড়ার
কথা
কয়েক হাজার
বছরের চিহ্নের,
রেখার ভিতর থেকে রঙের আগুন ঠিকরে এসেছিল। ক্রমশ সংখ্যা, বর্গ, শব্দের থেকেও। উপদ্রুত হিমানি তথা আদিম জঙ্গলের মাঝে এক রাসায়নিক কাঠুরিয়া
ঢুকেছিল পিলসুজ খুঁজতে। তার বিকিরণে ক্রমশ বদলাতে লাগলো ক্লোরোফিলের আবোদা সবুজ।
আর যা যা ছিল পতঙ্গ প্রাণ, রক্তশিরা
মেদের কারুশিল্প তাতে এক অশৈলী আলো পড়তে শুরু করল গড়িয়ে। কাঠুরিয়ার কম্পিত,
নেশাড়ু, বাজতন্ময় হাতের সামনেই ঘটল যা ঘটার। ঝর্না উচিয়ে উঠতে
লাগল উপরে, মেঘের থেকে কেটে
পড়তে চাইল জল। সব মিলিয়ে স্বরাট হয়ে রইল এক তীব্র বুদবুদ — যার রঙ বা ডাকনাম নেই, যে দর্পন হওয়ার জন্য প্রণোদিত নয়, মেধা যার কাছে ধাপ্পা ও বোধ এক সাবেকি
কালশিটে মাত্র! ফলে ওই জঙ্গলের ইতিহাসফনারা মাথা দুলিয়ে নেচে গেয়ে যে যার রূপ ধারণ
করল একে একে। কুঁড়ি ও উদ্ভিদ তাদের উতরোল গর্ভকেশর ছুঁড়ে ফেলে দিল ভ্রণদিনের
দিকে।
পিলসুজ
হারিয়ে রইল পৃথিবীর রেটিনাদূরত্বেই
ইয়ে
জিন্দেগি উসিকি হ্যায়
গোল
চাকায় সরু কালো সুতোসমূহ পাক খেতে খেতে একটু রঙ লেগে যাওয়া পাতিলেবু বৃত্তে মিশছে।
আবার কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। ফিরেও আসছে বৃত্তের কাণা থেকে নতুন জন্ম পেয়ে। তাজ্জব ও
অনন্ত এই পাক। আর তন্মুহুর্তে এক দুই তিন করে কলোনি গড়ছে প্রাথমিক কোষ। কলা।
তন্ত্র। নিয়ম ও ব্যবস্থার মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে রক্তসংবাহক। স্নায়ু ডাকহরকরারা
এক্কাদোক্কা খেলতে বেরিয়ে পড়ছে। কোটি কোটি ত্বকগহ্বর মুহুর্তের মধ্যে কোঁৎ করে
শুষে নিচ্ছে ছায়া মায়া গন্ধ সমেত জিওল বিশ্বের রূপসংবাদ।
পৃথিবী
অর্থে তার কাছে তখন কানভাঙা এক কাঠ টাট্টু বৈ নয়। মাথাভাঙা হাফটোন ব্লকে মনোকালার
রাজমহল্লা ও কুমারি রাজকুমারির ঘুম ভাঙানোর তোড়জোড়। কাঠটাট্টুর সঙ্গে দুলছে
বগলভেলিয়ার ঝাড়, অর্কিডের
মরাপাতা, নামতা এড়ানো বাতাস।
বাগান অর্থে তো আঁতুরঘর। প্রাসঙ্গিকতা জুড়ে তখন কোনও ফুলনাম নয়, বরং মাটি খুঁড়ে দেখা। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের
বইয়ের ছবির মতো নিটোল মূল মুলরোম আর মূলত্র অন্বেষণে বিকেল ভেসে সন্ধ্যা। একের পর
এক চারাগাছ খুনের স্বাক্ষ্য বহন করতে করতে কেটে পড়ে হাওয়া। এই সব সিরিয়াল
সন্ত্রাস, মূল থেকে উপড়ে
নেওয়া রোগাভোগা শোকেরা হু হু করে বয়ে যায়। কর্কশ, সদ্যমৃত, গাছসংসারের প্রধান আর্নিং মেম্বার প্রধানমূলের কাছে ঝুরো ঝুরো হয়ে গড়িয়ে
পড়ে অপরাধবোধে ভোগা মাটি। এভাবেই বিপদের ব্যকরণ শেখা। ছোটো কিন্তু কেয়ারি করা
জমিতে অর্কিডের বন, নাম ধরে
ডাকলে যার ঐশ্বর্য বাড়ে। তুলসি জঙ্গল চিবিয়ে নিলে গোটা দি্নের মত ভেষজসঙ্গীত বাজে
অন্তরে অন্তরে। দুব্বো ঘাসে মকরৎ বিন্দুর মত এক দু’কুচি গভীর ভায়োলেট ক্রমশ মৃদু হয়ে থিরথির করে। হাতও
বাড়ায়।
আজ
যানে কি জিদ না করো
শুতে
যাওয়ার আগে কয়েক দাগ এলিজি পান করে নেওয়ার প্রয়োজন কখনও কমবে না। ঘুম অর্থাৎ
সংঘর্ষবিরতি পর্বের মৃত্যুকবিতা পেরিঅ্যাক্টিনের মমতায় ধরে রাখে মৃন্ময় বালিশকে।
চিন্তাকে আরও অদীক্ষিত করার আশকারাও দেয়। সমস্ত চেনা হাঁস এরপর অচেনা জলে ওলোটপালট
খাবে। সুন্দরী গুটি পোকার মত আঁচল নামিয়ে দিয়ে তবেই ঘুমরাতের সন্ত্রাসকে পাওয়া
যায়। তার থেকে যা ক্রমসেচন হয় তার তালিকাও বড় মনোময়। অর্থাৎ খেত থেকে ধান,
হাসপাতাল থেকে হলুদ, ব দ্বীপ থেকে চালাক পাথর। সে সবের সঙ্গে
বিছানাবন্ধুত্ব করতে করতেই বিবিধ ভারতীর তরঙ্গে কোনও সপ্তম ঋতুর সন্ধান। শীত
বিদ্যুতের করস্পর্শে কেঁপে ওঠে পদমূল। ঘড়ির ক্লান্ত শব্দ তার উচ্ছন্নের যাওয়ার
স্বাক্ষ্যবাহী। ভয়ংকর দুর্বা আচ্ছন্ন এজলাশে কুহকপ্রাণ ঘোটকীরা সওয়ালনামা নিয়ে
বেফালতু ঝগড়া মাচায়। আর রোখা গেল না অবয়ব বৈকল্যের সেই দ্রা দিম অট্টহাসিকে,
যা কিনা চারিয়ে যাচ্ছে, দ্যাখো, দন্তমঞ্জনের লালে! পাখা ঝাপটাতে ঝাপটাকে ভারী ব্যস্ত
হয়ে শেষ মুহূর্তে আসে উকিল। শুধু ঘুমের ব্যাকরণ জানে না বলে তার মামলা এগিয়ে নিয়ে
যেতে প্রতিপদে বাধা আসে। ঠাকুমার এঁকে দেওয়া কাঁথার উপর মহাপক্ষীর ছায়া এসে বসে।
সব অপেক্ষাকে শিরোধার্য করে দিয়ে যায়
ফির
মরনে কা ইরাদা হ্যায়
যেন আর
কেউ লিখতেই দেবে না নব মধু বাতা ঋতায়তে। লিখে কিছু দেখানোর প্রয়োজন ছেড়ে চলে
গিয়েছে যে শীতে, তার
প্রধান প্রতিভা থেকে ভিক্ষাদাসেরা বেড়িয়ে পড়ছে। হাভাতে তপস্যাতেও ঘুম ভাঙাতে
পারা যায়নি দেওয়ালে টানানো অসমাপিকা ছবির। বরং মধুর হত্যার জন্য জল ছিটিয়ে নিকিয়ে
রাখা হয়েছে কাঠ ও কয়লার ককাশ নির্জন দাওয়া। হুল্লাটে ভরানো রোমকূপেরা দ্রুত শুষে
নিতে চাইছে সমস্ত নাছোড় উল্কিপ্রবণতাকে। মৃত্যু থেকে সুন্দর পর্যন্ত যে মামুলি
মিছিল, তার দু’পাশ জুড়ে ময়ুরবাহনেরা বসে আছে। ভোরকাপের
ছলছবিলায় কিছু চা চলকে পড়বে এই আশায়। আর কোনও দ্রাবিড় বিহ্বল সমষ্টির প্রয়োজন
নেই আঞ্চলিক ভূগোলে। নালিশহীন নারকোল বৃক্ষসমূহ ধুর-দুপুরে সমাহিত! চারিদিকে
পিতৃস্নেহের মত নরম রোদ। ফিরবার পথে মুখব্যাদান করে রেখেছে স্মৃতিমেলা থেকে কেনা
মুখোশ আর তার দুধে দাঁত। থাকার কোনও অর্থ নেই। না থাকারও। এই কাঁপন, দ্রুত মুছে যাওয়া, এই যে এতবড় পুতুলের মতো সংসার আর খেলনা
কলোনি — কে এর দায় নেবে ? কোন নোটিস বোর্ডে কাটা
ঘুড়ির মতো ঝুলে থাকবে এইসব বিজ্ঞপ্তি? গোপাল ভাঁড়ের মত সুসময়কে মালা গোলমরিচ দিতে কে এসে
দাঁড়াবে চিলেকোঠায়? অথচ জং
ধরে যাচ্ছে জল নোলকে, মায়াবী
রাতগুলিকে নির্লজ্জ করতে চেয়ে গিলে নিচ্ছে জন্মদিন জরায়ু।
এই
তো সময়। প্রথম বমির মতো আচম্বিতে এসো ..
No comments:
Post a Comment