Saturday 19 October 2019

বাক্‌ ১৩৮ ।। সিলভিয়া প্লাথের 'ড্যাডি' ।। অনুবাদ- শৌনক সরকার

Image result for sylvia plath



কবি পরিচিতি-১৯৩২ সালের ২৭ অক্টোবর বোস্টনের ম্যাসাচুসেটসে জন্মগ্রহণ করেন সিলভিয়া প্লাথ, খুব অল্প বয়সেই তাঁর মধ্যে লেখনী প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। মাত্র আট বছর বয়সে সিলভিয়ার কবিতা প্রকাশিত হয়েছিলো বোস্টন হেরল্ড পত্রিকার শিশু শাখায়, শিল্পের প্রতি আগ্রহও ছিলো বরাবরই এবং  মাত্র পনেরো বছর বয়সে ১৯৪৭ সালে জিতেছিলেন চিত্রশিল্পের জন্য দ্য স্কলাস্টিক আর্ট অ্যান্ড রাইটিং অ্যাওয়ার্ড। 



তাঁর শৈল্পিক মন জীবনে আশার চেয়ে, আনন্দের চেয়ে হতাশা, বিষাদ আর যন্ত্রণা খুঁজে পেতেন বেশিঅবশ্য এই যন্ত্রণাই তাঁর লেখনীর শক্তি জুগিয়েছে।



১৯৫৬ সালে টেড হিউজকে বিয়ে করেন তিনি কিন্তু তা সুখকর হয়নি।



প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'The Colossus', তাঁর রচিত শিশুতোষ বইগুলোর মধ্যে রয়েছে 'The Bed Book', 'Mrs. Cherry's Kitchen', 'Collected Children's Stories' ইত্যাদি। প্লাথের রচিত শেষ কবিতা সংকলন 'Ariel' নামে প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর পরে, ১৯৬৫ সালে। এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত 'Daddy' এবং 'Lady Lazarus' এর মতো অসাধারণ কবিতাগুলো তাঁকে এনে দেয় জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মাননাগুলো এবং  প্রথম ব্যক্তি হিসাবে তিনি মরণোত্তর সাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হন।



জীবনের কাছে হেরে গিয়ে ১৯৬৩ সালের ১১ ই ফেব্রুয়ারি প্লাথ নিজেকে বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে শেষ করে দিয়েছিলেন।







বাবা



বাবা তুমি আর, তুমি আর পরো না

সেই কালো জুতো,

বাস করেছি আমি যার মধ্যে

তোমার পায়ের মতো করে,

রিক্ত, ম্লান হয়ে, তিরিশটা  বছর,

সাহস পর্যন্ত হয়নি কখনো হাঁচার বা নিশ্বাস ফেলার।


বাবা, তোমাকে আমার মেরে ফেলতে হত সেদিন ।

কিন্তু চলে গেলে তুমি আমার সময়ের বহু আগেই -

এক বস্তা ইশ্বর, মার্বেলের মত ভারী,

ভয়ানক মূর্তি এবং বিরাট ধুসর এক পা নিয়েই

এবং এক বিশাল মাথা খেয়ালী অতলান্তিকের দিকে,

যেখানে নীলের উপর সীমের মত সবুজ বর্ষিত হয় কখনো

সুন্দর নসেট সৈকতের জলে ।

তোমার আরগ্যের জন্য আমি প্রার্থনা করতাম।

আহ, তুমি।

জার্মান ভাষায়, সেই পোলিশ শহরে যাকে

রোলার  দিয়ে সমান করে দেয়া হয়েছিল

কারন যুদ্ধ, যুদ্ধ আর যুদ্ধ ।

সেই শহরের নামটি খুবই পরিচিত।

আমার পোলিশ বন্ধু

বলেছে এরকম আছে কয়েক ডজন।

তাই আমি বলতে পারব না কখনই

কোথায় তুমি পা রেখেছ,

কোথায় তোমার শেকড়।

পারিনি বলতে কথা তোমার সাথে কখনই,

জিভ  আটকে গিয়েছে চোয়ালে,

আটকে গিয়েছে কাঁটাতারের ফাঁদে।

আমি, আমি, আমি, আর আমি

কথাই বলতে পারতাম না চেষ্টা করেও।

আমার মনে হত প্রতিটি জার্মানই তুমি

এবং অশ্রাব্য তোমার সব  ভাষা,


একটা  যন্ত্র , একটা  যন্ত্র  যেন

আমাকে বিরক্ত করছে ইহুদীদের মত ।

একজন ইহুদী দাখাউকে, আউসভিৎজকে, বেলসেনেকে।

আমি কথা বলা শুরু করলাম ইহুদীদের মত করে,

আমার মনে হয় আমি হয়ত ইহুদী হয়ে যাব।


টিরল অঞ্চলের তুষারপাত, কিংবা ভিয়েনার স্বচ্ছ বিয়ার

সত্যি নয় কিংবা  খাঁটি নয়  তোমার কাছে।

আমার যাযাবর পূর্বপুরুষী এবং আমার অদ্ভুত ভাগ্য

এবং আমার নকল ব্যাগ, আমার সাধারণ ব্যাগ

আমি হয়তো একটু  পরিমাণে হলেও ইহুদী।


আমি তোমাকে সবসময়ই ভয় পেতাম

তোমার যুদ্ধবিমান, তোমার গোয়েবলীয় প্রচার

তোমার পরিপাটি গোঁফ

তোমার আর্য চোখ, উজ্জ্বল নীল,

জার্মান সাঁজোয়াবাহিনীর সেই পুরুষ, সেই পুরুষ, ওহ তুমি ।


ইশ্বর নয়, কিন্তু একটি  স্বস্তিকচিহ্ন

নিকষ কালো এক চিহ্ন, কোনো  আলো তা ভেদ করতে পারে না।

প্রতিটি নারীই একজন ফ্যাসিবাদীকে পুজো করে,

মুখে লাথি মারা  সেই জুতোকে , সেই নিষ্ঠুরকে

নিষ্ঠুর হৃদয় তোমার মত এক পশুকে ওরা পুজো করে।


তুমি ব্লাকবোর্ডের সামনে দাড়িয়ে বাবা,

যে ছবিটি আমার কাছে আছে সেখানে।

তোমার থুতনিতে একটি খাঁজ আছে যেখানে

তোমার জুতোর  জায়গা  ছিল ।

কিন্তু কম শয়তান মনে হচ্ছে না তোমাকে তার জন্যে।

না, সেই কৃষ্ণাঙ্গের চেয়েও কম না যে

আমার সুন্দর হৃদয় দুটুকরো করে দিয়েছিল।

আমার বয়স ছিল দশ যখন

ওরা তোমাকে কবর দিল।

কুড়ি  বছর বয়সে আমি মরতে চেয়েছিলাম

এবং ফিরতে চেয়েছিলাম তোমার কাছে, শুধু তোমার কাছেই।

আমার মনে হয়েছিল তোমার প্রতিটি হাড়মজ্জা  দিয়েও কাজ চলে যাবে।


কিন্তু তারা আমাকে থলে থেকে বের করে

এবং আমাকে আঁঠা দিয়ে জুড়ে দিয়েছিল।

তখন আমি জানি আমাকে  কি করতে হবে,

আমি তোমার একটি প্রস্তরমূর্তি বানাই,

একটি কৃষ্ণাঙ্গ মুর্তি মাইন কাম্ফের মত যার চেহারা।


এবং নিপীড়নের প্রতি ভালোবাসা জন্মালো আমার

এবং আমি বলেছি যে  আমি রাজী, আমি রাজী ।

তাই বাবা, আমার অবশেষে মুক্তি হয়েছে

সেই কালো টেলিফোনটার তার উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে,

সেই কন্ঠ আর আমাকে বিরক্ত করবে না কখনো।


আমি যদি একজনকে খুন করে থাকি

তাহলে কিন্তু আমি দুজনকেই খুন করেছি ।

সেই রক্তচোষা যে তোমার প্রতিমূর্তি হয়ে এসেছিল আমার কাছে

আর  বছরের পর বছর ধরে আমার রক্ত চুষেছিল,

সাত বছর ধরে, যদি তুমি জানতে চাও সময়টা কিংবা মুহূর্তটা।

বাবা, তুমি এখন শুতে পার।


বাবা তোমার কালো হৃদয়ে এখন একটি লম্বা পেরেক গেঁথে দেওয়া হয়েছে ।

গ্রামের লোকজন কখনই

দেখতে পারত না তোমাকে,

তারা এখন খুশীতে নাচছে আর

পা দিয়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে  তোমাকে।

তারা সবসময়ই জানত তুমিই...।

বাবা, বাবা, ওহ জারজ বাবা আমি মুক্তি পেয়েছি অবশেষে।


No comments:

Post a Comment