Wednesday 23 October 2019

বাক্‌ ১৩৮ ।। মোনালী রায় লিখছেন নেটিজেনদের নিয়ে



উপস! ইহ অ্যাপস!!


সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্ফোরণ আমাদিগকে এক অপরূপ রূপকথার জগতে আনিয়া ফেলিয়াছে যাহা স্বর্গাদপি গরীয়সী। ব্যক্তিগত বিরহ বিবাদ বিসংবাদ সমষ্টিতে ভাগ করিয়া লইবার সুবিধা থাকায় নেটিজেনের দুঃখভার দ্রুত কম হইয়া যাইতেছে এবং আমোদের প্রভূত উপকরণ ওয়ালে ওয়ালে অযাচিত বিতরণের ফলে বস্তুত এক অনবরত আনন্দলোকে অবগাহন করিবার সুযোগ হাতের মুঠোয় আসিয়া পড়িতেছে।


যাহারা মরদেহ ছাড়িয়া যাইতেছেন, তাহারাও এই মুঠোবন্দি অমৃতলোকে আপাত পার্মানেন্ট হইয়া রহিয়া যাইতেছেন।  কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বেশ কিছু সময় পরে, গান্ধারী - কুন্তি - ধৃতরাষ্ট্র -বিদুরের বাণপ্রস্থে অবস্থানকালীন ব্যসদেব আপন যোগবলে কর্ণ-দুর্যোধনসহ  সকল মৃত ওয়ারিয়রদিগকে মর্ত্যলোকে আহ্বান করিয়াছিলেন... বর্তমানে, মৃত আত্মার ভার্চুয়াল জীবন অন্তর্জালযোগে চির আহ্বায়িত। এমনও দেখা যাইতেছে, কোনও হতভাগা/হতভাগিনী পূর্বপরিচিত  মৃত আত্মাকে তাহার জীবিত টাইমলাইনে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইয়া অ্যাক্সেপ্টেড হইবার অপেক্ষায় অনন্ত প্রহর গুনিতেছে।


ভাবিতে ভাল লাগে, এ ধরিত্রী ইউনিভার্সএর আদিম কণা ও শক্তিতে গঠিত। ইহার সকল অণু-পরমাণু খনিজ উপাদান জলবায়ু জীবজগতের একাংশ আজিকার শহুরে নেটিজেন সম্প্রদায়.... তাহারাও একই ইউনিভার্স তথা প্রকৃতির  অংশ! তবু কি বিচ্ছিন্ন!  মানব সম্প্রদায় ব্যতীত এ ধরিত্রীর অন্য কিছুই তো অন্তর্জালমোহে আবিষ্ট নহে!


চেরোনোবিলে পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর বিজ্ঞানীরা জায়গাটিকে পরবর্তী ২০,০০০ (!!!) বসন্তের জন্য বসবাসের অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছিলেন,  বাস্তবে দেখা যাইতেছে মাত্র ৩০ বসন্তেই অদম্য আদিম প্রকৃতি, পারমানবিক আফটারম্যথকে তুচ্ছ করিয়া চেরনোবিল ও সংলগ্ন এরিয়াকে চমকপ্রদভাবে সতেজে দখল করিয়া লইতেছে, নিজ নিজ পুত্র-কন্যা সমেত !


সকল থিয়োরীকে ভুল প্রমাণ করিয়া বারংবার জীবনে ফিরিয়া আসিবার এই অসম্ভব শক্তির বাস কোথায়!  প্রকৃতির শরীর মনন নাকি আত্মায়! অথবা হিউম্যান পারসেপশন বহির্ভূত অন্য কোনও প্যারামিটারে!  


যাহাই হউক, নাগরিক জীবনের অন্তরতম ও সর্বত্রগামী অ্যাপল-অ্যান্ড্রয়েডবাহিত অ্যাপস হইল এই সময়ের ব্রহ্মাস্ত্র। নিউক্লিয়ার অস্ত্রশস্ত্র  তাহার নিকট নিতান্ত পটকা। অদ্য, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড এই অ্যাপ-অস্ত্রের বশীভূত।  মহাকাশ হইতে পাতাল পর্যন্ত বিস্তৃত সকল সুযোগ সুবিধা আড়ম্বরের পাশাপাশি  বর্তমান ব্রহ্ম-পুত্র/পুত্রীগণ অ্যাপস দ্বারাই স্বয়ম্বর হইতে দিগম্বর অবধি জার্নি পছন্দ করিতেছেন।


সামান্য কিছু শারীরিক প্রয়োজন ভিন্ন মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিশেষ সঞ্চালনার প্রয়োজন পৃথিবীর গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেলের মতন.... ক্রমাগত নামিয়া যাইতেছে! কোনও অদম্য শক্তিবলে এইসকল অবলুপ্তপ্রায় প্রয়োজন এবং ওয়াটার লেভেল খানিক উঠিয়া আসিলে ত্রি-চতুঃ- পঞ্চ (আসন্ন) জিবির ভার্চুয়াল জগত ও তাহার বাহিরের পৃথিবী আরো খানিকটা সাস্টেইনেবল হইতে পারিত , হয়ত।


মায়ের মা-ঠাকুমারা বলিতেন, ভালোবাসা - বিশ্বাস এইসব শব্দের অন্তরাত্মা অমিত শক্তিধর। ভাল না বাসিলে মেঘ জমিতে পারে না। বিশ্বাস না জন্মাইলে বৃষ্টি আসে না পৃথিবীর শরীরে....

প্রকৃতিতে যে অনর্গল অকারণ অযাচিত ভালবাসার স্রোত বহমান  যুগ যুগ ধরিয়া.... আজিকার নেটিজেনের  প্রোফাইলে, ওয়ালে, মস্তিষ্কে, হৃদয়ে তাহা বহিতেছে তো!  


আমরা সপ্তমের পরবর্তী স্বর্গতে বাস করিতেছি নাকি মূর্খের, তাহা কেবল সময়

অথবা প্রলয় কহিতে পারে....

No comments:

Post a Comment