বর্শা
ফলকের ছায়া
তুমি কিছু দেখ নি, আমরাও কিছু দেখি না শুধু শুনি হাওয়ার কলরোল
যা ধ্বনিকে নিয়ে গেছে মাটির কাছাকাছি।
দূরাগত শব্দের মতো সে এক ভীষণরকম বলে বলে
যাওয়া — আমি আছি!যেভাবে শিকড় অন্তিম বলয়টুকু ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকে।
কিন্তু কি আছে? কি তার নাম? সন্ধ্যার
পরিধি ধরে বিচ্ছেদের মতো লেগে থাকে!ধুনুচির গর্ভ থেকে কুন্ডলী পাকিয়ে ওঠে উপরের
দিকে!— মিশে যায় এই চরাচর ব্যাপী বাক্-প্রতিমার বুকে
— আমাদের গায়ে এসে লাগে হাওয়া তার।
তুমি কিছু দেখ না, আমাদেরও কিছু দেখা হয় নি শুধু নিস্তব্ধতার বলয়কে এই বর্ম এই বর্শা ঢেকে ঢেকে রাখে!
//
অতল
সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
সবার যখন ঘুম অতল সমুদ্রের মতো নিবিড়
সবাই যখন বলে — আজ থাক, উঠে পড়ি
সবার নিশ্বাস যখন হয়ে আসে শিথিল আর গোপন
সবার যখন একটা দুটো স্মৃতি নিয়ে বালিশ কাঁদে
সবার যখন শোবার জানালা অন্ধকারে হালকাভারী শিস দেয়
সবার যখন ভোররাতে মনের মধ্যে অলীক ডাকে
সবাই যখন বলতে থাকে শব্দ নয় শোক নয় অন্যকিছু
সবাই যখন নির্জনতার ট্রেন
ধরে নিজের মধ্যে প্রবেশ করে
তখন সবাই বীজ পায়,চাষের জন্য মাটি পায়
সবাই তখন বলতে থাকে —অবগাহন, অবগাহন!
//
নিস্তব্ধ লোকালয়
বলি শান্ত হও,মাথা ঠান্ডা রাখো।
যা হবার তাই হবে।
এভাবে কথা বললে মুহুর্মুহু বাতাসেরও
শ্বাসনালি কাঁপে; দেয়ালে দেয়ালে চক্রান্ত
চলে কানের ইসারায়।
তার চেয়ে শান্ত হওয়া ভালো।ভালো সূক্ষ্ম
অবসরে দুরবিনে চোখ রাখা — বুঝে নেওয়া
লঙ্গরখানায় প্ররোচিত লাইন কতদূর গেছে;
শান্ত হবার চেয়ে আরও বেশি শান্ত হও
— নিস্তব্ধ লোকালয়ে বুকের মধ্যে জলধ্বনি পাবে
//
ন্যুড
খুব বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে
আমি তোমার থেকে বহু দূরে এখন
তুমি বৃষ্টিতে নিশ্চই ভিজবে জানি
ফলে কি করা যাবে তোমার একটি ন্যুড চিত্রকল্প ছাড়া
তবে তাই হোক
ভিজতে ভিজতে যখন তুমি ছাদের কোনায় যাবে বোঁটা সামলাতে ; তাকাবে
এদিক ওদিক তখন অন্যমনস্কতায় কপালের একটি বৃষ্টি ফোঁটা গড়িয়ে যাবে
নীচে—
ঢালু পথ, ন্যুড চিত্রকল্পে তখন আমিও নামবো ওই
পাহাড়তলীতে
//
আমার
কবিতারা
পাখিদের ডানা ধার করে কবিতারা আসে — রিফিলের খুদকুঁড়ো খেয়ে
সাদা কাগছে বিছিয়ে দেওয়া আমার একান্ত উঠোনে তাদের একটি মোলায়েম পা বর্ণমালা আঁকে
বর্ণমালা জারিত হলে আমার
সাদা খাতা পাখিদের বাসা হয়ে উঠবে — একটি সোনালী ডিম কেন্দ্রে থাকবে তার, স্থিত নয়
— চঞ্চল
তারপর রাত্রিবেলা যখন কুয়াশা মুছে দেবে এসব
— শিরোনামে বিধ্বস্ত একটি বর্ষাও তুমি পাবে
যেভাবে মাটির দেবতারা সারারাত ভিজে ভিজে সকালে অবশেষে বিষন্ন
কাঠামোর বেশে পুরোনো সাতমহলা বাড়ির পানাপুকুরের পাশে পড়ে থাকে — বেরিয়ে
থাকে বিচালির ঘা,পাটের চুল আর গলায় ফাঁস লাগা উল্টোনো ধুনুচি!
No comments:
Post a Comment