Tuesday 22 October 2019

বাক্‌ ১৩৮ ।। জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়



এক ঈশ্বরীর প্রথম ও শেষ নিঃশ্বাস 


এক অতিপ্রাচীন ঈশ্বরীর জন্ম হ'ল।
বনভূমি পেরিয়ে সাদাবালির চরে, কয়েক জোড়া পায়ের ছাপ 
আঁকা ছিল বৃত্তাকারে, কল্পজ্যামিতিক ছন্দে। 
চাঁদের দিকে যাচ্ছিল জ্বলন্ত দারুকাষ্ঠের ধোঁয়া
এক শিশুকন্যাকে চাঁদের কাছাকাছি তুলে নামকরণ করা হ'ল অশ্রুত ভাষায়। 
সাদা বালুতটে তার ছায়া... বক্রসুন্দর চন্দ্রকলার ছায়ার মত। 
তার কোমরে বাঁধা হ'ল তামার ছুড়ি, 
নদীতটের ভিজে মাটি  ছোঁয়ানো হ'  নাভিকেন্দ্রে।
মহাহস্তির করোটির সামনে রাখা হ'ল খরগোশের নিথর দেহ,
এক-ঝলক রক্ত ছিটকে এসে লেগেছিল মহাহস্তির চন্দ্রশুভ্র দাঁতে। 
প্রজন্মান্তর হ'লে ধুলোয় মিশে যাবে মহাহস্তির করোটি;
তৃষিতের জিভ খুঁজবে নবাগতা ঈশ্বরীর স্তন। 
দপ করে জ্বলে উঠল আগুনে নিক্ষিপ্ত মরুপক্ষীর পালক, 
ঈশ্বরীর অভিষেক করে। 

এক অতিপ্রাচীন ঈশ্বরীর মৃত্যু হ'ল।
সে জানত, তিনভাগ জল আর একভাগ স্থলে সে আর কারও আরাধ্য নয়।
তাকে বিশ্বাস করে না কেউ।
ভেঙে পড়েছে তার সঙ্গে এ মহাপৃথিবীর প্রত্যাশার জীর্ণ সেতু।
 
ঝুলন্ত শেকড়ের মত তার ধূসর দীর্ঘ চুলে জটা,
সেখানে আটকে পড়া শুকনো পাতা... নিভু নিভু খয়েরী নক্ষত্রের মত।
উল্কাপাত দেখে শেষ প্রার্থনার পর তার মনে পড়েছিল -
আত্মবিস্মৃত হ'লে ঈশ্বরও প্রার্থনা করে অজ্ঞাতের প্রতি।
 
ধাতব খণ্ড বুকের মাঝখানের হাড় ভেঙে ওপারে চলে যাওয়ার মুহূর্তে
সে দেখতে পেলো
 -
তার প্রাচীন সহযোদ্ধাদের শেষ মূর্তির ক্ষয়, শেষ প্রার্থনাভূমির ধ্বংসাবশেষ।
মৃত্যুর পর সেই সব প্রাচীন সংস্কার পালন করার মত কেউ নেই।
সেই প্রাচীন বিশ্বাস ধারণ করে না আজকের বিষন্নভূমি, ধুলোরাশি।
তার শেষ নিঃশ্বাস পাক খেতে খেতে চলে গেল মরুপক্ষীর পালক উড়িয়ে।


2 comments:

  1. এরকম কবিতা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে এটাই আশীর্বাদ। জয়দীপদা অনেক ধন্যবাদ

    ReplyDelete
  2. জয়দীপ দা'র অন্যরকম একটা লেখা। পড়ে বেশ লাগলো। সারবস্তু আছে কবিতায়। 😊

    ReplyDelete