Sunday 20 October 2019

বাক্‌ ১৩৮ ।। মণিদীপা সেন



মাংসমুখর নিঃস্বতাঃ একটি অসুখের কবিতা- ১

মোমের টিমটিমে আলোয় দেখি পিতা মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হয় বাঘিনীর সাথে। অবসন্ন বাঘিনী যোনি মেলে ধরে পিতার জিভের সামনে। মা পাশে পড়ে থাকে নিথর। বিছানার পাশ ছেড়ে উঠে যায় সন্তান। বাবার দেরাজ থেকে সিগারেট চুরি করে গ্রিলের দরজায় দাঁড়ায়। ধোঁয়া ছাড়ে ঘেন্নায় বেঁকে যাওয়া ঠোঁট। বাথরুমে ঢুকে দ্যাখে সুইচ সক্রিয় কিন্তু আলো জ্বলে না। নিজের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে কারা যেন নগ্ন করে গেছে তাকে।   

গামছার পাশে ঝুলছে প্রথম মাপ দিয়ে তৈরি করা সাদা চুড়িদার। নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে দ্যাখে মিলিয়ে গ্যাছে স্তন। সে হয়ত ফিরে যাচ্ছে মাতৃগুহায়। তার নিথর মা না বাঘিনীর পেট, সে জানে না। 
  
অত্যাধিক ব্যাথা নিয়ে সে ছুটে যায় রাস্তায়। রাস্তায় দ্যাখে অনেকগুলো ডাক্তার একটা সাদা গাড়ির ডিকি খুলতে চেষ্টা করছে খুব। দ্যাখে, ভেতরে হাত পা মুড়ে শুয়ে আছে নবজাতক। গাড়িটার সাদা তার মায়ের হবু শাড়ির মত। তার বাবা মারা যাবে বাঘের আঁচড়ে। মৃতদেহ কোথায় পাওয়া যাবে? সুন্দরবন বা সোনাগাছি... সে জানে না।
শেষ চুরির সিগারেটটা সে ধরায়। ধোঁয়া ছেড়ে এগিয়ে যায় গাড়িটার দিকে। 


নির্বীজঃ  একটি অসুখের কবিতা- ২

কেমন নির্লোম রাত। পায়ের নখগুলো বেড়েছে। রাতের গা থেকে খসে পায়ের কোনে আটকে যাচ্ছে আমার পৃথিবীর  নিকটতম তারা। 

আমার চোখে হাত দাও। যেটুকু লেখোনি তার অপরাধবোধেই তুমি লিখছ এখনও। জানি। এবার আঙুল বের করে আনো; সোজাসুজি তুলে নাও ; ডগায়, মারিয়ানার বালি। আমার চেরা ফিলামেন্ট, কাটা রেটিনা... গ্রহণ শুরু হল।

অলস ইন্দ্রজাল।  কাউকে কাউকে তুমি নাম-এ ভালোবেসেছ।  সে জানে না, তার নামে সে-ই নেই। শুধু নাম আছে। সে জানে না, তার স্তন তার সাথেই রোজ বিট্রে করে। তুমি জানো শুধু, স্তনের বোঁটার ইচ্ছেমতো নাম রাখা যায়। 

যেন গুলির বাক্সে হাত ঢুকিয়েছ। কিচকিচ আওয়াজে রাস্তা খুলে যাচ্ছে। তলায় নরম আলো। আর একটু যাও। 
তরল ।  আর একটু যাও
তাপ। আর একটু যাও ...
তুপতুপে ক্যাভিয়ার। মাছের ডিমে মাখানো নুন আর
কন্ট্রাসেপটিভ। 

কড়িকাঠের ফাঁকে মাকড়সার বাসা আর তোমার ঈশ্বরবিশ্বাস। দেখা না যাওয়া প্রচন্ড অস্ত্বিত্ব নিয়ে বাঁচে। অথচ তুমি জানো মাছের চোখের পাতা আর ঘুম 
কী ভীষণ মিথ্যা
কী ভীষণ সত্যি!     


দৃশ্যত রিহ্যাবঃ একটি অসুখের কবিতা ৩ 

হিমজমা তুলোর বিছানা আর চাঁদোয়ার বীজ। অন্দর ঘেঁটে খুঁজছ সাইকোডেলিক ফলসা। ওয়ালপেপারের গা বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে বিড়াল, তার ঘুম , তার পাঁচিলসুলভ আচরণ। 

হিহি চাঁদ,  ভরপুর আবাদ। হিজাব তুলে পুড়িয়ে নিচ্ছে নিজেকে ইরাকি বর্ষা। তেলো পাতো, পাতায় তেলতেল স্বপ্ন রাখছি। উরুতে ঘষে উড়িয়ে দাও। শীতের বেরুখী হেরে যাক তোমার  গোপন চামড়ায়। 

লিঙ্ক আসবে। লিঙ্ক আসবে। ধৈর্য্য ধরে বসুন। বসুন্ধরার চাঁই চাঁই আলোয় খসে যাচ্ছে পেনশন। ষাটোর্ধ যা কিছু বড় হুজ্জুত। বড় হুজ্জুত এই সই মেলানো খেলা, এই জমানো সিঁড়ি বেয়ে উঠে জিভ পেতে দেওয়া; বন্ধ মুখে ম্যাজিকপপের মত ফাটানো এক এক সেকেন্ড।   
  
অসুখ সারিয়ে যেও। হিস্টিরিয়া সাজিয়ে রেখেছি; কিছু অজাচার, ঋতুভিত্তিক খসে যাওয়া চুল ও আমার প্রেম, আমার। এই শেষ।  কাবাডির দম ধার দিলাম। তুমিও কোনোদিন,  পৃথিবীর দীর্ঘতম চুমু খেও  ... 
হিসেব মিলেছে।  ঈষৎ বেঠিক সবার থাকে। দশমিকের পর তিনঘর যাওয়াই নিয়ম। তারপর তোমার মত ভুলেরা ফিরে আসতে আসতে ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই তোমার টিপ থেকেই পৌনঃপুনিক তুলেছি। বা পূর্ণচ্ছেদ। অথচ কি বিশ্বাসে তুমি কপাল পেতেছিলে! 

No comments:

Post a Comment