Sunday 20 October 2019

বাক্‌ ১৩৮ ।। মন্দিরা এষ



# ভাদ্রের দুপুর

ট্রেন বিষয়ক কবিতাগুলো খুঁজে দেখছি
যেখানে স্বল্প পেয়ারার বন। কচি পাতার গন্ধ। আর, আর হারিয়ে যাওয়া রেল-ঘুনটি। বাড়ির দিকে হালকা উঁইখোটা। যাহ! আমার আধেক বাড়ি কেটে নিলো ওরা! যেসব যায়গায় নদী, কেমন ঝাপসা দেখায়...
একটা সাইকেল পেলে হতো; ওদিকটায় আরেকবার, নয়তো শেষবার, মাঠের কোণে গড়িয়ে দিতাম আলগোছে । দেখতাম কতোদূর যায়, কার দিকে ঢলে পড়ে এই সন্ধ্যায়...
#
ক্লান্তির পেয়ালা উপচে পড়ছে বারান্দায়,
আমরা তখন মৌন ট্রাম্পেট।
ব্যাঙের কান্না ছেঁকে পাখিদের ডাকি।
কেবল রাতপ্যাঁচা সাড়া দিয়ে গেলো।
অথচ দুপুরবেলা ঝরণা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়াতেই-
আমার নগ্ন ঘাড়ে অসংখ্য পাখিদের দ্রুম।
একটু দূরে কোথাও বৃষ্টি বাজছে ধানে- আমি তার ছন্দ বুঝতে চাই।
অথচ আমার এই ধ্বসে পরা হাড়ের ভায়োলিন কার্যতই অক্ষম। 

#
এই বৃষ্টি অকারণ
ঝাপসা কাঁচের এপারে অহেতুক দাগ।
গাছেদের মনোটনি কেটে যাচ্ছে হয়তোবা
এ রকম সাদা আকাশ;
অনুচ্চ কান্নায়-ক্লেদে
প্লাবন আসেনি কখনও।
একটি অন্ধ বিকাল তবু দাঁড়িয়ে একা;
আমি তার কাঁধে হাত রেখে পার করি, পার হই
অন্ধ-জীবন!

# ক্ষরণ
নিজের থেকে বিচ্যূত এক ছায়া
এক্রেলিকে আঁকছে কালো হাসি
মোষের পেটে ছড়িয়ে দিয়ে মাথা
ঘুমের মাঝে শুনছে গৃহস্থালী।

হাইড্রোলিকে ক্ষুদ্রতর সকাল
আমি, আমি, এবং আমির ভিড়ে
পরিপাটি বিনম্র টংকার
উঠছে বেজে কথার আড়ে আড়ে।

নিজের থেকে বিচ্যূত যে ছায়া
হাততালিতে বৃষ্টি নামায় রোজ
ঘামের মাঝে গড়িয়ে পরা দুপুর
রক্তচোখে করছে কারো খোঁজ।

হারতে হারতে হারিয়ে ফেলাই স্বভাব
সিকি পয়সা- জগডম্বুর ফল
তার নদীর সাথে পুরানা ইয়ারী
ছায়ার সাথে খেলছে আজো জল।

নিজের থেকে বিচ্যূত সে ছায়া
কোথায় গিয়ে শিখছে দারুণ ম্যাজিক
হাওয়ার মাঝে দুভাগ করা শরীর
যেনো কোন সেল্যুলয়েড ট্র্যাজিক।

#
এই যে আলোর দিকে মুখ বাড়িয়ে অন্ধকারে বসে থাকা, এ আমার একান্ত। প্রতিবেশি ঘর থেকে যখন আলু-ভাতে রান্নার সুগন্ধ ছড়িয়ে পরে মুনিয়া ডাকা ভোরে, আমি আত্মস্থ হই আমার আশেপাশে 'মানুষ' থাকে। আমার খুব খিদে পায়। সামনের রাস্তায় যখন একটি-দুটি খালি রিক্সা ঘুম চোখে বেরিয়ে আসে, আমি আত্মস্থ হই, এখানে 'মানুষ'ই সাওয়ারি হয়। আমার বাইরে বেরিয়ে পরতে ইচ্ছা করে। এইতো পূর্বপাশে জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে একটি ন্যাংটো শিশু কাঁদছে, মানবশিশু! আচ্ছা ওর কি মা আছে? উদ্ভ্রান্তের মতো ওকে পেছনে ফেলে আমার দৃষ্টি আরেকটু ভেতরে চলে যায়, অপেক্ষা, অপেক্ষা, অপেক্ষা! উফ! ওর মা কেন আসছে না! আমার রাগ লাগে। আমি চোখ সরিয়ে নিই আক্রোশে। এতো বাতাস কই থেকে আসে! আমি চোখ বন্ধ করে ঘাপটি মেরে থাকি। আমার কাধের উপ্রে একটি লাল পিঁপড়া কামড়ে দিচ্ছে। আমি হেসে ফেলি। ছোটোবেলার মতো বলি- 'হিন্দু পিঁপড়া।' এইমাত্র পুরো মহল্লা কাঁপিয়ে রড বোঝাই ট্রাক চলে গেলো। মানুষ বাড়িঘর বানাবে। তাদের বারান্দাতেও একটা লাল গামছা পতাকার মতো পতপত করে উড়বে। আমি টের পাই আমার শান্তি লাগছে। আমার ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু আমি জানি, বিছানায় গেলেই আমার ঘুম চলে যাবে। এরচেয়ে যতক্ষণ পারা যায়, আমি নিজেকে গান শোনাই। মানুষের তৈরি রাগ ভৈরবী।
# 
তুমি জানো কি, এশহরের অনেক রিক্সাচালকের পিঠে গোঁজা আছে বাঁশি? ওরা জানে কি করে রুক্ষ রোদ্দুরে হাওয়া খেলাতে হয়। ওরা ঘাম বুনে নিয়ে আসে সতেজ বিকেল! ওদের বস্তিতে দুটি হলুদ ঢেঁড়স ফুল ফুটে ওঠে অর্কিডের অহং নিয়ে। 

চলো, একদিন ভায়োলিন বাজাই তাদের বাঁশির সুরে। একটি দুধ সাদা কবুতর উড়ুক আমাদের চারপাশ ঘিরে।

নাটমঞ্চ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। প্রত্যেক সত্য মানুষের পিঠে গোঁজা থাকুক একটি করে বাঁশি, তাদের অপেক্ষায় থাকুক লাল সুড়কি বিছানো পথের শেষে একটি শান্ত ঝিল। 


No comments:

Post a Comment