Tuesday 22 October 2019

বাক্‌ ১৩৮ ।। শতানীক রায়



ফিরে পাওয়া নদী

অনেকটা দিন মিশিয়ে দেখছি রাতও অনেকটা। সাদা পাতার কাছে সোনার সংসার ফুরিয়ে এলে টুকরো টুকরো সাপের চামড়া খসে পড়ে। ধীরে ধীরে ময়ূর কিংবা নীলমণিলতা... গাছের মতো জীবনে কখনও বা মানুষ হয়ে উঠি... তন্বী শরীর নিয়ে আমিই বা কয়টুকু বড়ো হই। কৃষ্ণের কাছে বারবার শরীর রাখার ব্যথা অথবা একটি সরু খেলা... মানুষ যখনই রাতের কাছে পরি হয়— সে দেখে তার হাতে মহাবিশ্ব ছাড়া কিছু নাই। ধূ ধূ শনিগ্রহ, স্বপ্ন ভেঙে আসা কুবের দেবতা সবই, মনে রেখো পৃথিবীর সবই একদিন সোনা হবে।

ঠিক চলে যাওয়ার আগের মুহূর্তে আমাকে নাবিক করে তোলো তুমি... রাম আর লক্ষ্মণের শরীরে নাকি শিবের কথা শুরু হয়। কালীকথা হয়। পুরোনো বাঁক। নদীর সেই পুরোনো বাঁক তার পাশে আমাদের ওল্ড মালদা স্টেশন... ছেঁড়া বনজঙ্গল পৃথিবীর রাজা হয়ে ওঠার মধ্যে আবার ফিরে যাওয়া আছে। চলো চলে যাই পাহাড়চূড়ায় অল্প কিছু মানুষ থাকে।

এতদিন পরে তুমি এলে। নৌকা নিয়ে এলে সাগরের জল নোনা তাও এলে। তোমার পিতার ঋণ কিছু হলেও মুছে গিয়েছে। রক্ষা করে আসছি বহুবছর থেকে...  এ নগরীর গুপ্ত আকার আমাকে আবারও নিজের কাছে নিয়ে আসে আবার নিয়ে যায় ফিরে... পাহাড় দেখতে গিয়ে সমতলের ইতিহাস টানে... ফিরে যাওয়া ময়ূরীর মতো একটু থেমে পিছন ফিরে জল দেখে নেওয়া সম্পর্কের কাছে নদী হয়ে যাওয়া দিঘি হয়ে যাওয়া শব্দ হয়ে যাওয়া... এই শব্দকে আরও ধীরে নীচু হয়ে চাষ করে তোলা আমাদের যৌথ শরীরে কর্তব্যের বোধ জেগে উঠলে মঙ্গলের আরতি দিয়ে দেখলে আবারও ধীবর হও আবার আমাদের যুগের পুঞ্জীভূত পাপ ঘিরে আসে, আমাদের পাপে সমগ্র পাতা পুড়ে যায় আমরা পুড়তে পুড়তে মদের গন্ধ মদের গান গেয়ে যাই

বহু কিছু আসে। আয়নার মতো বহু করে তোলা আরকী! এখন তোমাকে সোনা দিয়ে মেপে তোলার শব্দে ক্ষীণ অল্প আলো জন্মায়। তারপর তরঙ্গ জলের আলতো আলতো রেশমের ঢেউ। রেশম খেলে যাওয়া সময় আমাদের ধারণ করুক। কাক আর বকের খেলার কাছে কত কড পুরোনো নগরী কিংবা চাঁদ, চাঁদের আরও কবিতা হবে। নক্ষত্রের কাছে আরও সমস্ত ফুল ফল লতিকা খেলে যাওয়া সময়। আহা! মরে যাব নাকি আমরা পুনরায়... ঘড়ির জন্য আবার ফিরে যাই ফিরে যাই। এখানে ভাষার ময়ূর জাগে, এখানে মানুষের শরীর জাগে আস্তে আস্তে নরম হয়ে মিশে যায় সময়

হয়তো স্বপ্নের কবিতা লিখছি। লিখেই চলেছি। অনন্ত লিখছি। আকাশ লিখছি। নীলপদ্ম...  জ্যোৎস্নাকামিনী ঊরুর ফুল বা লিঙ্গের প্রতিচ্ছবি। আমাকে আরও বড়ো ধারক হতে হবে ওই বাবার সঙ্গে আজকের অন্তরঙ্গতা চলমান সময়ে রাতের খুব কাছাকাছি বড়োই ছোটো হয়ে গিয়েছি আমি, ধীরে উপরে তাকানোর মতো সময় বলে যা আছে কিংবা নেই। উপরে তাকানো অত বড়ো ঢালু মহাকাশের দিকে এই এখন পুনরায় রেখে দিতে ইচ্ছে করছে সবকিছু। আমার শরীরে যা কিছু চিতার পর্বত আছে বা সময়ের সবকিছু এখানে গচ্ছিত থাক। সখীর কাছে ফিরে যাই। এখানে আমার পুরোনো সখী ছোট্ট একটি ঘরে থাকে। ফিরে এসেছি তার কাছে, ফেরার মতো ফেরা হয়ে ফুল হয়ে।

9 comments:

  1. খুবই ভাল লাগল। প্রতিটাই।

    ReplyDelete
  2. শান্ত, সমাহিত ভাষায় লেখা কবিতা। গভীরতার সাথে অনাবিল আন্তরিকতা আর কপটতাহীন উচ্চারণ অভিভূত করে। বর্ণনামূলক কবিতায় সাধারণত এত কম্প্যাক্ট অনুভূতি খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যা এই গুচ্ছে পেলাম।

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো লাগল। কবিতাগুলোয় প্রকৃতি মিথ ও জীবন মিলেমিশে এক অনন্ত বিশ্বের সন্ধান আছে। চমৎকার।

    ReplyDelete
  4. বাহ। বেশ ভালো লাগলো ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালো লাগলো দাদা। কবিতাগুলো এক অপার মুগ্ধতায় জড়িয়ে আছে।

      Delete
  5. গভীরতা নিয়ে কোনো কথা হবে না। অপূর্ব !

    ReplyDelete
  6. প্রতিটিই ভালো। তবে, ১ এবং ৪ অনব। ❤

    ReplyDelete
  7. অদ্ভুত সুন্দর মুগ্ধতা আছে প্রতিটি কবিতায়। ভাবনার অনেকগুলো স্তর নিয়ে নাড়াচাড়া করলে এরকম কবিতা পাওয়া যায়

    ReplyDelete
  8. ভীষণ সুন্দর! একটা রেশ রেখে যাচ্ছে। মুগ্ধতার নীলমণিলতা রেখে গেলাম।

    ReplyDelete